মাহমুদা খাতুন সম্পর্কে

মাহমুদা খাতুন
প্রশিক্ষক
মাহমুদা খাতুনের কলেজ জীবন থেকে হস্তশিল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণের প্রতি আগ্রহ ছিল। সফল উদ্যোক্তা মাহমুদা খাতুনের জীবনের গল্প শুনলে সাধারণ একজন নারীর জীবন-যুদ্ধের সম্পর্কে জানা যায়। যিনি কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন এবং নিজেকে একজন স্বনির্ভর ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রাজধানী ঢাকা শহরের মত স্থানে মাহমুদা খাতুন নিজেকে প্রশিক্ষণ এবং সেলাই ও হস্তশিল্প ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি সমাজের অসহায় নারী পুরুষদের কর্মসংস্থানে কাজ করে যাচ্ছেন।
জীবনের শুরুতে প্রশিক্ষণের হাতেখড়ি হয় যুব উন্নয়নে। প্রথম প্রথম ঘরে বসেই প্রতিবেশীদের টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করে অর্থ উপার্জন শুরু করেন। কিন্তু প্রতিবেশীদের কাছ থেকে দিনদিন কাজের অনুরোধ তাকে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠার ব্যপারে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এ পর্যায়ে ১৯৯৯ সালের দিকে তিনি ঘরে বসেই বাড়ির আশেপাশের মহিলাদের অর্থের বিনিময়ে ব্লক-বাটিক, প্রিণ্টিং ও সেলাইয়ের কাজের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। পরর্তীতে মিরপুরের কাফরুলে একটি ঘর ভাড়া করে তার ছোট্ট একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন। তখন থেকেই দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণের প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তোলেন সফল উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষক মাহমুদা খাতুন।
যদিও ব্যবসা পরিচালনার জন্য তার পেশাদারী কোন যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা ছিলো না। তারপরেও নিজের কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা ও একাগ্রতার উপর ভরসা করে মাহমুদা তার স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত হননি। ২০১২ সালের দিকে মাহমুদা তার স্বপ্ন পূরণের পথে একধাপ এগিয়ে যান। যখন তিনি দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের পরিচালনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন ”Skill Full” এর সাথে। Skill Full” এর সহযোগী হিসেবে চুক্তির পূর্বে মাহমুদার প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণার্থীদের বসার জন্য ভালোমত জায়গা হত না। যে ঘরটি তিনি ভাড়া নিয়েছিলেন সেই ছোট্ট ঘরেই চলতো প্রশিক্ষণের ক্লাস এবং তিনি নিজেই ছিলেন একমাত্র প্রশিক্ষক। চুক্তি হওয়ার সাথে সাথে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির চেহারা আমূল পরিবর্তন হয়।
মাহমুদা খাতুন তার শতাব্দী ফ্যাশন ডিজাইন নামেরপ্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির জন্য ৫ কক্ষের একটি বাসা ভাড়া করেন। যেখানে ৪ টি কক্ষে প্রশিক্ষণ এবং ১টি কক্ষে অফিস পরিচালনা করতে শুরু করেন। তার এই প্রতিষ্ঠানে ৮ জন প্রশিক্ষক নিয়োগ প্রাপ্ত আছেন যারা কারচুপি, ব্লক, বাটিক প্রিন্টিং, ইলেকট্রিকাল হাউস ওয়ারিং , রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশনিং এবং সেলাই প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষকদের প্রত্যেকে মৌলিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি বিষয়ক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট ১১৭০ জন যুব, পুরুষ, মহিলাকে নানান পেশায় এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। মাহমুদা খাতুন ‘Sudhokkho’ প্রজেক্ট এর সাথে কাজ করেছেন ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত, তৈরী পোশাক শিল্প সেক্টরে ‘Sewing Machine Operator’ পদে তার অধীনে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন প্রায় ১২০০ নারী পুরুষকে , যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে গার্মেন্টস এ অপারেটর পদে চাকুরীতে যোগদান করেছে
মাহমুদা খাতুন নিজে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সরকারী যুব উন্নয়ন অফিস থেকে ব্লক, বাটিক ও পোশাক তৈরীতে, খাদ্য ও পুষ্টি অধিদপ্তর থেকে জ্যাম জেলি ও আচার বিষয়ে। ব্যাক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন সেন্টার থেকে হ্যান্ড এ্যামব্রয়ডারী, কারচুপি, বেকারী, মাটির তৈরী গহনা, পুতির গহনা তৈরী ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি আরো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ”মৌলিক প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য বিষয়ে। এছাড়াও তিনি Pidilite Bangladesh- এর ব্র্যান্ড ”Hobby IDEAS” এর শিক্ষক হিসাবেও কাজ করেছেন।
তিনি একজন দক্ষ সংগঠক। ”শতাব্দী সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক” হিসাবে সেবামূলক কাজ করে থাকেন। তিনি প্রশিক্ষণ দেন নেতৃত্ব বিষয়ক, দ্বন্দ্ব নিরসন, রিপোর্ট রাইটিং, জেন্ডার আরো কিছু বিষয়ে। দেশব্যাপী কাজ করছেন নারী সংগঠনসমূহের জাতীয় নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন (দূর্বার) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসাবে। নারীর সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে থাকে তার সংগঠন।
বাংলাদেশে এসএমই প্রশিক্ষণ জগতে মাহমুদা খাতুন এক অনন্য নাম। তার হাত ধরে প্রশিক্ষিত হয়েছেন বাংলাদেশের হাজার হাজার যুবক যুবতী। সফল উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষক মাহমুদা খাতুন থাকবেন ঐক্য এসএমই ডিজিটাল ইনস্টিটিউট এর সাথে।